বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন আর শাড়ি পছন্দ করেন না এমন মেয়ে লাখে মেলা দায় আর সেটি যদি ঢাকাই শাড়ি হয় তাহলে তো কথাই নেই। ঢাকাই শাড়ির ইতিহাস আপনাকে জানতেই আজ আমাদের বিশেষ নিবেদন। মূলত ঢাকাইয়া শাড়ি, বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুক্ষ্ম সুতোয় বোনা এই শাড়ি তার অপূর্ব নকশা, মসৃণ ভাব এবং আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।
ইতিহাসের সূচনা:
ঢাকাইয়া শাড়ির ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। মনে করা হয় যে, ১৪শ শতাব্দীতে মুঘল আমলে এই শাড়ির উৎপত্তি হয়েছিল। ঐ সময়ে ঢাকা শহর ছিল মসলিনের জন্য বিখ্যাত, এবং এই মসলিন কাপড় ব্যবহার করেই ঢাকাইয়া শাড়ি বোনা শুরু হয়েছিল। আগে বিশেষ ধরনের বুননের কৌশল কে জামদানি বলা হতো আর জামিদানির এই বুনন কেই ঢাকাই বলা হয় । সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীর ঢাকাইয়া শাড়ির প্রতি ছিলেন বিশেষ অনুরক্ত। তাদের সমর্থনে এই শিল্পের অনেক উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটলেও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতনের পরে যখন ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের শাসক হয় তখন ঢাকাইয়া শাড়ির বাজারে বেশ কিছুটা ভাটা পড়ে। ব্রিটিশরা মসলিন শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে এবং ঢাকাইয়া শাড়ির উৎপাদন হ্রাস পায় ।
পুনরুজ্জীবন:
স্বাধীনতার পর ঢাকাইয়া শাড়ির ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা শুরু হয়। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পদক্ষেপের ফলে এই শিল্প আবারো গতি লাভ করে। এরপরেই ‘ঢাকাই’ শব্দটর প্রোচলন ব্যাপক ভাবে শুরু হয়, আমাদের একটু বোঝা দরকার ঢাকা অঞ্চলে যা তৈরি হয়, সেটাই ঢাকাই। এখন বস্ত্র তৈরি না হলেও ঢাকা অঞ্চলের বিখ্যাত বস্ত্র বয়ন এলাকা ছিল সাভার। সাভার থেকে সোনারগাঁ—এ পুরো অঞ্চল ছিল মূলত ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলেই তৈরি হতো ঢাকাই শাড়ি। কোনো একটি মাত্র শাড়ি ‘ঢাকাই শাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ছিল না। ঢাকা অঞ্চলে তৈরি হওয়া যেকোনো শাড়িই আসলে ঢাকাই শাড়ি হিসেবে সাধারণভাবে পরিচিত ছিল।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে ঢাকাইয়া শাড়ি দেশ-বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয়। বিভিন্ন নকশা, রঙ ও কারুকার্যের ঢাকাইয়া শাড়ি বাজারে পাওয়া যায় এবং আমাদের কাছে অত্যান্ত আনন্দের সংবাদ এটি যে বর্তমানে সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাই শাড়ি দেশের বাহিরেও রপ্তানি হচ্ছে ।
মূলত শাড়ি নিয়ে যত লেখাই প্রকাশ করা হোক না কেন তবুও লেখা শেষ হবে না শাড়ি বাংলাদেশের ঐতিজ্জোর প্রতিক ঢাকাইয়া শাড়ি মূলত সুতির তন্তু দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব , সামাজিক উৎসবে, বসন্তে, ফাগুনে বাংলার নারীদের শোভা বর্ধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।